এমন এক দৈত্যাকার যন্ত্র কল্পনা করুন তো, যা একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো বাতাস শুষে নেয়! যেন-তেন বাতাস নয়, এ যন্ত্র বাতাস থেকে ঠিক কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসই শোষণ করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে যে গ্যাস, তা এভাবে বৃহৎ পরিসরে গ্রহণ করলে ইতিবাচক ফলই আসবে। আইসল্যান্ডে ঠিক এমনই এক কারখানা চালু হয়েছে, যা বিশ্বের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণকারী কারখানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।

'ম্যামথ' নামের এই কারখানাটি বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড আলাদা করার জন্য বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। এরপর, এই পৃথক করা কার্বনকে আইসল্যান্ডের পরিবেশবান্ধব ভূতাপীয় শক্তি দ্বারা চালিত যন্ত্রের সাহায্যে মাটির গভীরে ঢোকানো হয়। সেখানে কার্বনগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাথরে রূপান্তরিত হয়, ফলে সেগুলো আর কখনোই বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষিত করতে পারে না। এই প্রক্রিয়াটিকে 'কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন' (Carbon Sequestration) বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে 'ম্যামথ' কারখানাটি পূর্ণ ক্ষমতায় চললে প্রতি বছর ৩৬,০০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম হবে। রাস্তা থেকে প্রায় ৮,৬০০টি গাড়ি সরিয়ে ফেললে যেরকম পরিবেশবান্ধব হবে, এটি তেমনই। যদিও এই প্রযুক্তি এখনো নতুন এবং এর খরচ অনেক বেশি, তবে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে। আগামী কয়েক বছরে আরো বড় এবং উন্নত কারখানা তৈরি হতে পারে বলে আশা করা যায়। এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিরাট সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।

এই কারখানাটির একটি মডিউলার ডিজাইন রয়েছে, যার ফলে এটি সহজেই আরও বড় করা যাবে। বর্তমানে কারখানাটিতে ১২টি "কালেক্টর কন্টেইনার" রয়েছে এবং আরও অনেকগুলো যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই কন্টেইনারগুলোই মূলত বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণে দায়ী। তবে এমনটা মনে করার সুযোগ নেই যে এ কারখানা চালু হলেই জলবায়ু পরিবর্তন কমে আসবে। ২০৩০ সালের মধ্যেই সাত কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে, সেখানে ম্যামথ মাত্র ৩৬ হাজার মেট্রিক টন শোষণ করতে সক্ষম। কাজেই গ্রিনহাউজ গ্যাস কমিয়ে আনতে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। 

This Article is collected from Science Bee (www.sciencebee.com.bd)