আলবার্ট আইনস্টাইন- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বুদ্ধিমান মানুষের তালিকায় সবচেয়ে উপরের দিকে তার নাম পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে। নিজের কর্মকান্ড দিয়ে জিনিয়াস পদবী লাভ করেছেন, বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন তাদের ভুল, মহামতি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র যা প্রমাণ করতে ব্যর্থ সেই বুধ গ্রহের বিচ্যুতি প্রমাণ করেছেন এরকম শত শত কাজ দিয়ে এখনও অমর হয়ে আছেন আইনস্টাইন। তবে আইনস্টাইনের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন নিয়ে বেশ কিছু গুজব শোনা যায় বাস্তবে যা হয়তো ঘটেই নি। আজকে তেমনি কিছু গুজব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
১. আইনস্টাইন খারাপ ছাত্র ছিলেন।
আইনস্টাইন কখনোই খারাপ ছাত্র ছিলেন না। তার কথা বলতে দেরি হওয়ায় তার বাবা-মা তাকে অটিস্টিক মনে করেছিল ঠিকই তবে স্কুলে তার রেজাল্ট সবসময়ই ভালো ছিল বিশেষ করে গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানে। আইনস্টাইন মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনার ইতি টানেন।
২. তিনি অ্যাস্পারর্গাস সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন।
তাকে অনেক বইয়ে প্রায়শই কিছুটা সংবেদনশীল,ঘরকুনো বলে পরিচয় করে দেওয়া হয়, স্কুলে তার এই ধরনের অভ্যাসের কিছু ঘটনাও পাওয়া যায়। এই কারণে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনি অ্যাস্পারর্গাস সিনড্রোমে আক্রান্ত কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো। আইনস্টাইনের ভ্রমণ ডায়েরি এবং তার বড়সড় বন্ধুমহল থেকে জানা যায় তিনি এই সিনড্রোমের ভুক্তভোগী নন।
৩. আইনস্টাইন স্বেচ্ছায় নিরামিষভোজী হয়েছিলেন।
৫০ বছর হওয়ার আগেই তিনি পাকস্থলী জনিত নানা সমস্যা ভুগতে শুরু করেন যার ফলস্বরূপ তার চিকিৎসক তাকে মাংস জাতীয় খাবার খেতে মানা করেন। আইনস্টাইন নিজের ইচ্ছায় নিরামিষ খেতে শুরু করেন নি।
৪. অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণের জন্য আইনস্টাইন দায়ী।
যদিও তার থিওরি বোমা তৈরিতে সাহায্য করেছিল তবে বোমা তৈরিতে প্রত্যক্ষভাবে তার হাত ছিল না। কিন্তু তিনি তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজাভেল্টের কাছে পারমাণবিক শক্তি বাড়ানোর কথা বলে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
৫. তিনি বামহাতি ছিলেন।
এই গুজবের সূত্রপাত ঘটে বামহাতিরা জিনিয়াস হয় এই গুজব থেকে। যদিও দুইটি গুজবই ভুয়া। আইনস্টাইন তার কলম ও ভায়োলিন দুইটিই ডান হাতে ধরতেন অর্থাৎ তিনি ডানহাতি ছিলেন। প্রমাণস্বরূপ বোর্ডে চক দিয়ে লিখা অবস্থায় তার অনেক ছবি রয়েছে।
৬. তার বিখ্যাত আবিষ্কারগুলোর পিছনে তার প্রথম স্ত্রীর কৃতিত্ব রয়েছে।
আইনস্টাইনের প্রথম স্ত্রী মাইলেভা মারিও তার ধারণা শোনার এবং তার কাগজপত্রের প্রুফরিডিংয়ের বাইরে সরাসরি তাঁর চিত্তাকর্ষক আবিষ্কারগুলো শুরু করতে অবদান রেখেছিলেন এমন কোনও দলিলিত প্রমাণ নেই। যদিও আইনস্টাইন ১৯০১ সালে মারিওকে লিখেছিলেন, " তখন আমি কতটা আনন্দিত ও গর্বিত হব যখন আমরা দুজন আমাদের আপেক্ষিক গতি সম্পর্কিত কাজগুলোকে সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে পারবো!"
৭. তিনি কেবল একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ছিলেন।
আইনস্টাইনের আবিষ্কার সম্পর্কে খুব কম লোকজনই জানে তবে আইনস্টাইন একজন বিখ্যাত আবিষ্কারকও ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারগুলো হচ্ছেঃ স্ব-সামঞ্জস্যকারী ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় শব্দ যন্ত্র, পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেটর।
৮. তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।
আইনস্টাইন ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম স্পষ্টবাদী বিজ্ঞানী। যদিও তিনি কখনও কোনও সরকারী রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি, তাকে ইস্রায়েলে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। (তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।) তিনি প্রায়শই অত্যাচারীদের বিরুদ্ধ শক্তিশালী অবস্থান নিতেন এবং নিপীড়িতদের পক্ষে বক্তব্য রাখতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি আফ্রিকান আমেরিকানদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছিলেন এবং আমেরিকান সংস্কৃতিতে তাদের অবদানের প্রশংসা করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে পেনসিলভেনিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে এই পদার্থবিজ্ঞানী পৃথকীকরণকে "শ্বেত মানুষের একটি রোগ," বলেছিলেন, তিনি আরও বলেন "আমি এ বিষয়ে চুপ করে বসে থাকতে চাই না।"
৯. আইনস্টাইন ডিসলেক্সিক ছিলেন।
আইনস্টাইন ডিসলেক্সিক ছিলেন না, তিনি স্কুলের খারাপ ছাত্র ছিলেন এই গুজবেরি একটি শাখা এটি।
১০. আইনস্টাইন সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর ছিলেন।
আইনস্টাইনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য তাকে গুপ্তচর মনে করেছিল এফবিআই। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এফবিআই তার প্রতিটি পদক্ষেপে কড়া নজর রাখে এবং এফবিআই এর কাছে থাকা আইনস্টাইনের ফাইলটি প্রায় ১৫০০ পৃষ্ঠার।
বিজ্ঞান এবং পৃথিবীকে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন, নিজের আর্দশে ছিলেন অনড়, নিজে হেরে যাননি অপরকে উৎসাহিত করেছেন জিততে। নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করে যাও জয় তোমার হবে এই মটোতে বিশ্বাসী ছিলেন এই মহামতি। শেষে আইনস্টাইনের উক্তি দিয়েই শেষ করা যাক,
"I still struggle with the same problems as ten years ago. I succeed in small matters but the real goal remains unattainable, even though it sometimes seems palpably close. It is hard, yet rewarding: hard because the goal is beyond my abilities, but rewarding because it makes one oblivious to the distractions of everyday life."
This Article is collected from Science Bee (www.sciencebee.com.bd)
0 Comments
Thenks for your comment!!