ল্যাগ্র্যাঞ্জ পয়েন্ট: মহাকাশের পার্কিং স্পট
সৌরজগতে কয়েকটি বিশেষ স্থান রয়েছে যেখানে পৃথিবী এবং সূর্যের মহাকর্ষ বলের মধ্যে সাম্যবস্থা বিরাজ করে। সেজন্য মহাশূন্যের এসব স্থানে কোন নভোযানের ঘূর্ণনের কেন্দ্রমুখী বল এবং ওখানে বিদ্যমান মহাকর্ষ বলের মধ্যে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। এর ফলে নভোযানটি সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর সাথে একই গতিতে ঘুরতে থাকে এবং আপাত দৃষ্টিতে স্থির অবস্থায় থাকে। পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হবে, নভোযানটি ওখানে পার্ক করা অবস্থায় রয়েছে।
সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে এরকম পাঁচটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এদেরকে বলে, ল্যাগ্র্যাঞ্জ পয়েন্ট। ১৭৭২ সালে ফরাসি গণিতশাস্ত্রবিদ জোসেফ লুই ল্যাগ্র্যাঞ্জ এই বিশেষ অবস্থানগুলোর গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর সম্মানে, এদের নামকরণ করা হয়েছে, লা গ্র্যান্জ পয়েন্ট।
সূর্য এবং পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের মাঝে অবস্থিত পাঁচটি ল্যাগ্র্যাঞ্জ পয়েন্টকে L1, L2, L3, L4 এবং L5 নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। । শাহাদাত হুসাইন আরিফ।Shahadat Husain Arif। Arif
বর্তমানে L1 এবং L2 পয়েন্টকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশ পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করছেন। পৃথিবী থেকে প্রায় দেড় মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এদের অবস্থান। L1 পয়েন্ট পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে অবস্থিত।। শাহাদাত হুসাইন আরিফ।Shahadat Husain Arif। Arif
সূর্যকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য L1 পয়েন্টে সোলার অ্যান্ড হেলিওস্ফেরিক অবসার্ভেটরি (SOHO) স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, L2 পয়েন্ট রয়েছে পৃথিবী থেকে সূর্যের সম্পূর্ণ বিপরীতে। এর ফলে ওখান থেকে মহাবিশ্বকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এজন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে L2 পয়েন্টে পাঠানো হয়েছে। এই দূরত্বে পৌঁছাতে টেলিস্কোপটির প্রায় এক মাস সময় লেগেছে।
ওখানে পৌঁছানোর পর টেলিস্কোপের যন্ত্রপাতিগুলোকে ধীরে ধীরে সচল করা হয়েছে। L2 পয়েন্ট থেকেই টেলিস্কোপটি নজর রাখছে মহাবিশ্বের গভীরে এবং পৃথিবীতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং ছবি পাঠাচ্ছে।। শাহাদাত হুসাইন আরিফ।Shahadat Husain Arif। Arif
এছাড়াও, L1 এবং L2 পয়েন্টে আরো বেশ কিছু মহাকাশযান স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নাসার WMAP স্পেসক্রাফট, ডিসকভার স্যাটেলাইট, জেনেসিস প্রোব, লিসা পাথ ফাইন্ডার, প্ল্যাঙ্ক স্যাটেলাইট; ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ইউক্লিড এবং গায়া; চাইনিজ মহাকাশ এজেন্সির চাঙ্গি ৫ অরবিটার এবং ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার আদিত্য এল ওয়ান মহাকাশ যান। এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু নভোযান অদূর ভবিষ্যতে L1 এবং L2 পয়েন্টে পাঠানো হবে। বোঝাই যাচ্ছে, মহাশূন্যের এই পার্কিং স্পটগুলো একসময় আরো বেশি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে।
বাকি তিনটি ল্যাগ্র্যাঞ্জ পয়েন্ট, L3, L4 এবং L5 কে এখনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পর্যবেক্ষণের কাজে লাগানো হয়নি। তবে ধারণা করা যায় ভবিষ্যতে এগুলোকেও কাজে লাগানো হতে পারে।
This Article is collected from Science Bee (www.sciencebee.com.bd)
0 Comments
Thenks for your comment!!